“শুধু শান্তি নয়, ইউক্রেইনীয়রা বাস্তবসম্মত শান্তিতে আগ্রহী কিনা তা দেখতে চাই আমরা। তারা যদি কেবল ২০১৪ ও ২০২২ এর সীমানার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে, তাহলে তো আপনি বুঝতেই পারছেন,” বলেছেন এক কর্মকর্তা।
যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়াকে বাস্তবসম্মত ছাড় দিতে ইউক্রেইন রাজি কিনা, তা জানতে মার্কিন কর্মকর্তারা সৌদি আরবে ইউক্রেইনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠককে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছেন।
দুই মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ কথা বলেছেন।
গত মাসে হোয়াইট হাউজে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডার পর কিইভ নতুন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে আগ্রহী কিনা, মঙ্গলবারের বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের নজর সেদিকেও থাকবে, বলেছেন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানানো এক কর্মকর্তা।
কিইভের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে রোববারই জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওনা হন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। মঙ্গলবার তার সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেইনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকবেন জেলেনস্কির অন্যতম সহযোগী আন্দ্রি ইয়েরমাক। রুবিওর সঙ্গে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফেরও থাকার কথা।
“শুধু শান্তি নয়, ইউক্রেইনীয়রা বাস্তবসম্মত শান্তিতে আগ্রহী কিনা তা দেখতে চাই আমরা। তারা যদি কেবল ২০১৪ ও ২০২২ এর সীমানার ব্যাপারে আগ্রহী থাকে, তাহলে তো আপনি বুঝতেই পারছেন,” বলেছেন এক কর্মকর্তা।
ট্রাম্প অবশ্য সৌদি আরবের বৈঠক নিয়ে আশাবাদী।
“আমার বিশ্বাস, চলতি সপ্তাহেই অনেক অগ্রগতি হতে যাচ্ছে,” মার্কিন প্রেসিডেন্ট এয়ার ফোর্স ওয়ানে তার সঙ্গে থাকা সাংবাদিকদের এমনটাই বলেছেন।
এদিকে রোববার রাতে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, ‘শান্তির জন্য কাজ চালিয়ে যেতে’ সোমবার তিনিও সৌদি আরব যাচ্ছেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউক্রেইনের প্রতিনিধিদলের বৈঠক ফল বয়ে আনবে বলে আশাবাদী জেলেনস্কি বলেছেন, উভয় দেশের জন্যই শান্তিকে এগিয়ে আনা ও সমর্থন অব্যাহত রাখা জরুরি।
তবে ইউক্রেইনের ইউরোপীয় মিত্ররা মনে করেন, শক্তিশালী অবস্থানে থেকেই কেবল ইউক্রেইন রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে, যে কারণে এখনই তার আগ্রাসনকারীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে দৌড়ে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না।
গত কিছুদিন ধরে জেলেনস্কিও বলছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শান্তি চান না এবং ইউক্রেইনে পরাজিত না হলে মস্কো এরপর ইউরোপের অন্য দেশেও হামলা চালাবে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল। আগের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো চালু করতেই দ্বিপাক্ষিক ওই বৈঠকে বসেছিলেন দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকরা।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেইনকে নিয়ে বেশ হতাশ ট্রাম্প বলছেন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশটির সেনা ও সম্পদ ফুরিয়ে আসছে, যে কারণে তাদের দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত।
কিইভকে বাধ্য করতে তার প্রশাসন ইউক্রেইনে অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ ও কিছু গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ও বন্ধ করে দেয়। তবে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইউক্রেইনকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে স্থগিতাদেশ ‘প্রায় শেষ হওয়ার পথে’।
সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে রাশিয়াকে শক্তিশালী ও যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এমনটা হলে মস্কোর অস্ত্র নামিয়ে রাখা এবং সমতার ভিত্তিতে একটি শান্তি চুক্তি করার সম্ভাবনা কম।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রুশ বাহিনী ইউক্রেইনে তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করেছে, গত গ্রীষ্মে কিইভবাহিনী পাল্টা হামলা চালিয়ে রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলের কিছু অংশ দখলে নিয়েছিল। রাশিয়ার সেনারা এখন ইউক্রেইনের ওই সেনাদেরও চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছে।