তিস্তার পানি নেমে যাচ্ছে ব্রহ্মপুত্রে। সেই সাথে শুকিয়ে যাচ্ছে গতিপথ হারা তিস্তা। কিন্তু তবুও পানির তীব্র স্রোতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে নদী ভাঙন। গত একসপ্তাহ ধরে এমন ভয়াল রূপ নিয়েছে প্রমত্তা তিস্তা। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। এরেইমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক বসতঘর। ভাঙনে বিলীন হয়েছে শতাধিক একর ফসলি জমি।
এদিকে তিস্তার এমন ভয়াবহ ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করেও কোনো ফল পায়নি স্থানীয়রা। বাধ্য হয়ে ভাঙন ঠেকাতে ড্রেজার দিয়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ওইসব ভাঙন কবলিত স্থানে স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। তাই আপাতত জরুরি কোনো কাজ করছি না।
জানা গেছে, গত একসপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর খেয়া ঘাটে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়তই তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, ফসলি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা। ইতোমধ্যে ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে সতরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুল থেকে নদীর দূরুত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। যে কোনো সময় তিস্তা গর্ভে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। আর হরিপুর খেয়াঘাট ভাঙনের কবলে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে নৌচলাচল। ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধ ও অন্যের জমিতে। কেউ আশ্রয় না পেয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যত্র।
লালচামার ঘাটের বাসিন্দা মজিবুল হক বলেন, বন্যার আগেও নদীর ভাঙনে বাড়িঘর, ফসলি জমি বিলীন হয়েছে। এখন আবার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। দফায় দফায় ভাঙনে কখন আমাদের বাড়িঘর গিলে নেয় এ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।
হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি বলেন, তিস্তার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। গত কয়েক দিনে হরিপুর ঘাটসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বসতভিটে ও হাজারো বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।
নদী বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক সাদেকুল ইসলাম দুলাল বলেন, তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে হাজারো বসত-বাড়ি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। তার দাবি, জিও ব্যাগ কোনো সমাধান নয়, ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী তীররক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, হরিপুর ও শ্রীপুরে স্থায়ী তীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এটি আগামী ডিসেম্বর মাসে কাজ শুরু করা হবে। তাই সেই স্থানগুলোতে জরুরি কোনো কাজ করা হচ্ছে না। আর লালচামার এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলছে।
অব্যাহত নদীর ভাঙনে উদ্বিগ্ন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তৎপর রয়েছে। বরাবরেই ভাঙন রোধে নদী তীরবর্তী এলাকায় শুধু অস্থায়ীভাবে বালুর বস্তা ফেলানোর কাজ হয়েছে। তবে এবার ৬টি পয়েন্টে ৪১২ কোটি টাকার প্রকল্পে একনেকে অনুমোদন হয়েছে।
Leave a Reply