এশিয়ার অন্যতম বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এ বন গবেষণার অন্যতম জায়গা। বনের প্রকৃতি ও প্রাণী বিষয়ে দেশ বিদেশের গবেষক বা গবেষকদল কাজ করে থাকে। তেমনিভাবে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর ধরে উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর ওপর একটি গবেষণা সংস্থা গবেষণা চালিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর শ্রেণির প্রাণীর সন্ধান পেয়েছে। তার মধ্য ১১টি নতুন প্রজাতির প্রাণী। যা বাংলাদেশে নতুন।
অন্যদিকে এ বনে আগে ছিল এমন ২৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছে গবেষকদল। অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র চেকলিস্টে এই গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণা দল ও লাউয়াছড়া বন বিভাগের সূত্রে জানা যায়, ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স এর উদ্যোগে এবং ক্যারিনাম ও বাংলাদেশ বন বিভাগের সহযোগিতায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ পাইথন প্রজেক্টের অধীনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বনে অজগর সাপের ওপর গবেষণা প্রথমিক কাজ শুরু করে। গবেষণা দল মাঠে নামলে সামনে উঠে আসে উদ্যানের জীববৈচিত্র্যের নানা ক্ষেত্র। মূলত অজগর সাপের আবাসস্থল খুঁজতে গিয়ে উদ্যানে মরে থাকা উভচর ও সরীসৃপ প্রাণীর দেহাবশেষ পাওয়ার মধ্যে দিয়ে এই গবেষণা কাজের যাত্রা শুরু হয়। বন বিভাগের অনুমতিক্রমে পরবর্তীতে অজগর ও কচ্ছপের ওপর শুরু হওয়া মূল গবেষণা কাজের পাশাপাশি বনের ভেতরে প্রাপ্ত উভচর ও সরীসৃপ প্রাণীর ছবি, তাদের দৈহিক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজ চলে।
দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণায় লাউয়াছড়ায় উভচর শ্রেণির প্রাণীদের মধ্যে ১৯ প্রজাতির ব্যাঙ এবং মাত্র এক প্রজাতির সিসিলিয়ান জাতীয় প্রাণী পাওয়া গেছে। সরীসৃপ শ্রেণির মধ্যে পাওয়া গেছে দুই প্রজাতির কচ্ছপ, ১৪ প্রজাতির টিকটিকি জাতীয় (২ প্রজাতির গুইসাপ সহ) এবং ৩৫ প্রজাতির সাপ। যার মধ্যে রয়েছে মাত্র ৬ প্রজাতির বিষাক্ত সাপ। এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে রাজ গোখরা, অজগর ও পাহাড়ি হলুদ কচ্ছপ-ইতিমধ্যে মহাবিপন্ন বা বিপন্ন এর তালিকায় অন্তর্ভূক্ত। অপরদিকে চিকিলা, বাইবুন গেছো ব্যাঙ, ব্লিথের সাপের মতো প্রজাতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পাওয়া গেছে। এগুলো আইইউসিএন এর লাল তালিকায় অপর্যাপ্ত তথ্যের কারণে ডাটা ডেফিসিয়েন্ট তালিকায় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে নতুন প্রাপ্ত ১১টি সরীসৃপ ও উভচর প্রাণীর বাংলা নামকরণ প্রক্রিয়াধীন আছে।
গবেষক দলের প্রধান বন্যপ্রাণী গবেষক শাহারিয়ার রহমান সিজার জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর শ্রেণির প্রাণী সন্ধান পেয়েছে। তার মধ্য ১১টি নতুন প্রজাতির প্রাণী। যা বাংলাদেশে নতুন। এ ছাড়া এত দিন ধরে যে ধারনা ছিল সেই প্রাণীগুলোর মধ্য ২৩ প্রজাতির প্রাণী আমাদের গবেষণাতে ধরা পড়েনি। সেগুলো ভুলভাবে শনাক্ত করা হয়েছে ধরে নিয়ে আমরা তা লিস্ট থেকে বাদ দিয়েছি। যেহেতু আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছি তাই যা পেয়েছি তাই শুধু অ্যাড করেছি।
তিনি আরো জানান, এই গবেষণা কাজের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও তার আশপাশের এলাকার উভচর ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদ্ঘাটন করা। বিশেষ করে ব্যাঙ ও গিরগিটি/ টিকটিকি জাতীয় প্রাণীদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রজাতি নিরূপণের জন্য তাদের দেহের বিভিন্ন তথ্য (যেমন: হাত-পায়ের দৈর্ঘ্য, স্কেল থাকলে তার সংখ্যা ইত্যাদি) নেওয়া প্রয়োজন, যা বর্তমান গবেষণাপত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। গবেষণাদল শুধু প্রাণীর সন্ধান করেনি বনের প্রাণীরা কি কি সমস্যার সম্মুখীন রয়েছে ও ভবিষ্যতে কি হবে তার তথ্য গবেষণায় তুলে ধরেছেন।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা গবেষণাপত্রটি পেয়েছি। পর্যবেক্ষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বন্যপ্রাণীর জন্য সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে আমাদের আন্তরিকতা এবং দায়িত্ববোধ থাকবে।
Leave a Reply