Dhaka 2:59 pm, Wednesday, 8 May 2024

স্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে বাড়িছাড়া, ২৭ বছর পর ফিরলেন

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:17:22 am, Saturday, 30 October 2021
  • 3103 Time View
এ জে তপন : স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে কোলের শিশু সন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হোন স্বামী। এদিকে স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কাটিয়ে দেন জীবনের ২৭টি বছর। অবশেষে প্রায় এক মাস আগে পরিবার-স্বজনের কাছে ফিরে আসেন জহর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু।

গল্পের বাস্তব চরিত্রের মানুষটি কুড়িগ্রামের সদরের পৌরসভার বাসিন্দা জহর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু (৬৫)। পেশায় কৃষক জহর উদ্দিন বাচ্চু ১৯৯১ সালে পাশের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে আগমনী গ্রামে বিয়ে করেন জাহেদা বেগমকে (৫০)। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল না। বিয়ের পর ছয় মাসের শিশু সন্তান জাহিদুল ইসলামকে রেখে নিরুদ্দেশ হন জহর উদ্দিন। ফেরেন প্রায় তিন বছর পরে। এরপর আবারও সংসারে তুচ্ছ ঘটনায় অভিমান করে ১৯৯৪ সালে একেবারই নিরুদ্দেশ হন তিনি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার সন্ধান না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন। দীর্ঘ ২৭টি বছর পর হঠাৎ গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিজ জন্মস্থানে ফিরে আসেন জহির উদ্দিন। আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে পরিবার ও প্রতিবেশীরা।

জহির উদ্দিন বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন তিনি। বাসে করে চলে যান যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের গোবিন্দুপর গ্রামে। সেখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মিলে মিশে কাটিয়েছেন জীবনের এই দীর্ঘ সময়। কেউ তার ঠিকানা না জানলেও তাকে বেশ ভালোবাসতেন। সবাই তাকে বাচ্চু ভাই বলে ডাকতেন। সেখানে তাকে কিছু দিন ফেরারি জীবন কাটাতে হয়েছে। এরপর তিনি গোবিন্দপুরের মৃত মকুন্দ মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে বেশ কয়েক বছর কাটে তার। পরে সবার সঙ্গে সখ্যতা আর ভালোবাসায় আশ্রয় হয় সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের দোতলায় এক কক্ষে। এখানেই তার কেটে যায় ২০টি বছর। তিনি চাকরি না করলেও পরিষদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে সার্বিক দেখভালের কাজ করতেন।

এছাড়াও জীবিকার জন্য সাবেক চেয়ারম্যান বিকাশ মল্লিক একটি ভ্যানগাড়ি কিনে দেন। এর পাশাপাশি সনাতন ধর্মালম্বীদের সৎকার, বিয়েসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিল তার পদচারণা। আচার-আচরণে তিনি পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বারসহ স্থানীয়দের সবারই কাছে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

জহির উদ্দিনের ভাতিজা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চাচা ফিরে আসবে আমরা কখনই ভাবতে পারিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির করার পরেও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ফুফাতো বোন খবর পাঠায় চাচা ফেরত এসেছেন। পরে তাকে বাসায় এনে রাখার ব্যবস্থা করি। তার স্ত্রী-সন্তানকে খবর দেই। তারা এসে দেখে গেছেন। বর্তমানে বয়স বেড়ে যাওয়া চাচা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার একমাত্র সন্তান তার বাবাকে এতোদিন দেখেনি। বাবা ফিরে আসায় দেখা করে সে তার কর্মস্থল ঢাকাতে চলে গেছেন।

শফিকুল আরও বলেন, ‘চাচার কাছে সব কিছু জানতে পেরে চাচাকে নিয়ে সেই জায়গায় গিয়েছিলাম। ভেবেছি তিনি হয়তো সেখানে নতুন করে বিয়ে করে সংসার বেঁধেছেন। কিন্তু না সেখানে আমি দু’দিন ছিলাম। কিন্তু সেখানকার মানুষ অন্য ধর্মের হলেও আমার চাচাকে তারা নিজেদের পরিবারের সদস্য মতই দেখতো। ধর্ম দিয়ে আমার চাচাকে আশ্রয়-প্রশয় দেয়নি। একজন মানুষ হিসেবে তাকে এতোদিন তাদের সমাজে রেখেছে। আমার চাচাকে তারা ধর্মান্তরিত করে সেখানেই বিয়ে দিয়ে সংসার তৈরি করে দিতে পারত। তারা সেটা করেনি। আমি-আমার পরিবারের লোকজন সবাই তাদের শ্রদ্ধা জানাই। এখন চাচা ওখানকার কথা মনে হলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।’

শফিকুল বলেন, ‘সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চৌকাদার শেখর এবং তার স্ত্রী সব থেকে কাছের ছিল চাচার। বয়স বেড়ে যাওয়ায় তাদের পরামর্শে গত মাসে ফেরত আসেন তিনি। চাচা সেখান থেকে আসতে না চাওয়ায় চেয়ারম্যান, সচিবসহ অনেকেই বুঝিয়েছেন যে, তুমি জন্মস্থানে গিয়ে দেখ পরিবারের কেউ না থাকলে তুমি সেখানকার একটু মাটি নিয়ে এসো। যেন তোমার মৃত্যুর পর তোমাকে সেই মাটি দিয়ে কবর দিতে পারে এখানকার মানুষ। এমন অনেক কথাবার্তা দিয়ে বুঝিয়ে চাচাকে ফেরত পাঠায় তারা। বর্তমানে চাচা আমার বাড়িতেই আছে।’

জহর উদ্দিনের স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, ‘২৭টি বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে ভিক্ষা করে, মানুষের বাড়িত কাজ করে বড় করছি। আর আশায় ছিলাম ছেলের বাপ ফিরে আসবে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য কোথাও বিয়েও করিনি। মানুষটার রাগ খুব, আর বুদ্ধিসুদ্ধি কম। এতোদিন পর হলেও ফিরে এসেছে এটাই আনন্দের বিষয়।’

পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘জহর উদ্দিনের খোঁজ না থাকায় আমরা গ্রামবাসী ভেবিছিলাম সে মারা গেছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর তিনি ফেরত আসায় প্রতিবেশী ও তার পরিবারের লোকজন সবাই খুব খুশি হয়েছি।’

সুন্দলী ইউনিয়নের বাসিন্দা তুষার কান্তি বলেন, ‘বাচ্চু মণ্ডল অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি চলে যাওয়া পুরো ইউনিয়নবাসী আজ ব্যথিত হলেও সবাই আনন্দিত যে তিনি তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। বাচ্চু মুসলিম ধর্মের মানুষ হয়েও এখানকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় সবার সঙ্গেই করতেন অবাধ চলাফেরা। কখনই কারো সঙ্গে তার মনোমালিন্য হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। আমরা তাকে আশীর্বাদ করি তার পরিবার নিয়ে তিনি যেন বাকি জীবনটা সুখে কাটাতে পারে।’

সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘তার মধ্যস্ততায় ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাচ্চু মণ্ডলকে তার পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয়। ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ তাকে ভালবাসত। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। অনেক গাছ তিনি লাগিয়েছেন। তার ব্যবহার ভালো ছিল। মুসলিম হলেও তিনি প্রতিটি হিন্দু মানুষ মারা গেলে মৃতদেহের সৎকারে অংশ নিতেন। ইউনিয়নে কারও বাড়ি ভালো রান্না হলে তাকে দাওয়াত দেওয়া হতো। এক কথায় সবার সঙ্গে তার সুসস্পর্ক ছিল। তার পরিবারের লোকের কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে পেরে একদিকে আমাদের কষ্ট হলেও বড় আনন্দ তিনি তার পরিবার ফিরে পেয়েছেন। বাচ্চু চলে যাওয়া এখন আমাদের পরিষদ শূন্যতা বিরাজ করছে।

Share to MessengerShare to LinkedInShare to WhatsAppShare to GmailShare to More

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

স্ত্রীর সঙ্গে রাগ করে বাড়িছাড়া, ২৭ বছর পর ফিরলেন

Update Time : 03:17:22 am, Saturday, 30 October 2021
এ জে তপন : স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে কোলের শিশু সন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হোন স্বামী। এদিকে স্বামীর ফিরে আসার অপেক্ষা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কাটিয়ে দেন জীবনের ২৭টি বছর। অবশেষে প্রায় এক মাস আগে পরিবার-স্বজনের কাছে ফিরে আসেন জহর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু।

গল্পের বাস্তব চরিত্রের মানুষটি কুড়িগ্রামের সদরের পৌরসভার বাসিন্দা জহর উদ্দিন ওরফে বাচ্চু (৬৫)। পেশায় কৃষক জহর উদ্দিন বাচ্চু ১৯৯১ সালে পাশের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নে আগমনী গ্রামে বিয়ে করেন জাহেদা বেগমকে (৫০)। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল না। বিয়ের পর ছয় মাসের শিশু সন্তান জাহিদুল ইসলামকে রেখে নিরুদ্দেশ হন জহর উদ্দিন। ফেরেন প্রায় তিন বছর পরে। এরপর আবারও সংসারে তুচ্ছ ঘটনায় অভিমান করে ১৯৯৪ সালে একেবারই নিরুদ্দেশ হন তিনি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার সন্ধান না পেয়ে হাল ছেড়ে দেন। দীর্ঘ ২৭টি বছর পর হঠাৎ গত ৩০ সেপ্টেম্বর নিজ জন্মস্থানে ফিরে আসেন জহির উদ্দিন। আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে পরিবার ও প্রতিবেশীরা।

জহির উদ্দিন বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে অভিমান করে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন তিনি। বাসে করে চলে যান যশোরের অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের গোবিন্দুপর গ্রামে। সেখানকার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মিলে মিশে কাটিয়েছেন জীবনের এই দীর্ঘ সময়। কেউ তার ঠিকানা না জানলেও তাকে বেশ ভালোবাসতেন। সবাই তাকে বাচ্চু ভাই বলে ডাকতেন। সেখানে তাকে কিছু দিন ফেরারি জীবন কাটাতে হয়েছে। এরপর তিনি গোবিন্দপুরের মৃত মকুন্দ মল্লিকের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানে বেশ কয়েক বছর কাটে তার। পরে সবার সঙ্গে সখ্যতা আর ভালোবাসায় আশ্রয় হয় সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের দোতলায় এক কক্ষে। এখানেই তার কেটে যায় ২০টি বছর। তিনি চাকরি না করলেও পরিষদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে সার্বিক দেখভালের কাজ করতেন।

এছাড়াও জীবিকার জন্য সাবেক চেয়ারম্যান বিকাশ মল্লিক একটি ভ্যানগাড়ি কিনে দেন। এর পাশাপাশি সনাতন ধর্মালম্বীদের সৎকার, বিয়েসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে ছিল তার পদচারণা। আচার-আচরণে তিনি পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বারসহ স্থানীয়দের সবারই কাছে আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

জহির উদ্দিনের ভাতিজা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার চাচা ফিরে আসবে আমরা কখনই ভাবতে পারিনি। অনেক খোঁজাখুঁজির করার পরেও না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ফুফাতো বোন খবর পাঠায় চাচা ফেরত এসেছেন। পরে তাকে বাসায় এনে রাখার ব্যবস্থা করি। তার স্ত্রী-সন্তানকে খবর দেই। তারা এসে দেখে গেছেন। বর্তমানে বয়স বেড়ে যাওয়া চাচা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার একমাত্র সন্তান তার বাবাকে এতোদিন দেখেনি। বাবা ফিরে আসায় দেখা করে সে তার কর্মস্থল ঢাকাতে চলে গেছেন।

শফিকুল আরও বলেন, ‘চাচার কাছে সব কিছু জানতে পেরে চাচাকে নিয়ে সেই জায়গায় গিয়েছিলাম। ভেবেছি তিনি হয়তো সেখানে নতুন করে বিয়ে করে সংসার বেঁধেছেন। কিন্তু না সেখানে আমি দু’দিন ছিলাম। কিন্তু সেখানকার মানুষ অন্য ধর্মের হলেও আমার চাচাকে তারা নিজেদের পরিবারের সদস্য মতই দেখতো। ধর্ম দিয়ে আমার চাচাকে আশ্রয়-প্রশয় দেয়নি। একজন মানুষ হিসেবে তাকে এতোদিন তাদের সমাজে রেখেছে। আমার চাচাকে তারা ধর্মান্তরিত করে সেখানেই বিয়ে দিয়ে সংসার তৈরি করে দিতে পারত। তারা সেটা করেনি। আমি-আমার পরিবারের লোকজন সবাই তাদের শ্রদ্ধা জানাই। এখন চাচা ওখানকার কথা মনে হলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।’

শফিকুল বলেন, ‘সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চৌকাদার শেখর এবং তার স্ত্রী সব থেকে কাছের ছিল চাচার। বয়স বেড়ে যাওয়ায় তাদের পরামর্শে গত মাসে ফেরত আসেন তিনি। চাচা সেখান থেকে আসতে না চাওয়ায় চেয়ারম্যান, সচিবসহ অনেকেই বুঝিয়েছেন যে, তুমি জন্মস্থানে গিয়ে দেখ পরিবারের কেউ না থাকলে তুমি সেখানকার একটু মাটি নিয়ে এসো। যেন তোমার মৃত্যুর পর তোমাকে সেই মাটি দিয়ে কবর দিতে পারে এখানকার মানুষ। এমন অনেক কথাবার্তা দিয়ে বুঝিয়ে চাচাকে ফেরত পাঠায় তারা। বর্তমানে চাচা আমার বাড়িতেই আছে।’

জহর উদ্দিনের স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, ‘২৭টি বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে ভিক্ষা করে, মানুষের বাড়িত কাজ করে বড় করছি। আর আশায় ছিলাম ছেলের বাপ ফিরে আসবে। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে অন্য কোথাও বিয়েও করিনি। মানুষটার রাগ খুব, আর বুদ্ধিসুদ্ধি কম। এতোদিন পর হলেও ফিরে এসেছে এটাই আনন্দের বিষয়।’

পলাশবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, ‘জহর উদ্দিনের খোঁজ না থাকায় আমরা গ্রামবাসী ভেবিছিলাম সে মারা গেছে। দীর্ঘ ২৭ বছর পর তিনি ফেরত আসায় প্রতিবেশী ও তার পরিবারের লোকজন সবাই খুব খুশি হয়েছি।’

সুন্দলী ইউনিয়নের বাসিন্দা তুষার কান্তি বলেন, ‘বাচ্চু মণ্ডল অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি চলে যাওয়া পুরো ইউনিয়নবাসী আজ ব্যথিত হলেও সবাই আনন্দিত যে তিনি তার পরিবার ফিরে পেয়েছে। বাচ্চু মুসলিম ধর্মের মানুষ হয়েও এখানকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় সবার সঙ্গেই করতেন অবাধ চলাফেরা। কখনই কারো সঙ্গে তার মনোমালিন্য হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেনি। আমরা তাকে আশীর্বাদ করি তার পরিবার নিয়ে তিনি যেন বাকি জীবনটা সুখে কাটাতে পারে।’

সুন্দলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল বলেন, ‘তার মধ্যস্ততায় ২৬ অক্টোবর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাচ্চু মণ্ডলকে তার পরিবারের কাছে হন্তান্তর করা হয়। ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষ তাকে ভালবাসত। গাছের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। অনেক গাছ তিনি লাগিয়েছেন। তার ব্যবহার ভালো ছিল। মুসলিম হলেও তিনি প্রতিটি হিন্দু মানুষ মারা গেলে মৃতদেহের সৎকারে অংশ নিতেন। ইউনিয়নে কারও বাড়ি ভালো রান্না হলে তাকে দাওয়াত দেওয়া হতো। এক কথায় সবার সঙ্গে তার সুসস্পর্ক ছিল। তার পরিবারের লোকের কাছে তাকে ফেরত পাঠাতে পেরে একদিকে আমাদের কষ্ট হলেও বড় আনন্দ তিনি তার পরিবার ফিরে পেয়েছেন। বাচ্চু চলে যাওয়া এখন আমাদের পরিষদ শূন্যতা বিরাজ করছে।

Share to MessengerShare to LinkedInShare to WhatsAppShare to GmailShare to More