Dhaka 6:03 am, Thursday, 25 April 2024

পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের চুক্তির অগ্রগতি জানতে ৩ মাস সময় দিলো হাইকোর্ট

  • Reporter Name
  • Update Time : 10:52:59 am, Wednesday, 26 October 2022
  • 2165 Time View

এনবি নিউজ : বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য সহায়তা গ্রহণের জন্য ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তিন মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ বুধবার ২৬ অক্টোবর বিএফআইইউর প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

আজ প্রতিবেদন দাখিল করে বিএফআইইউ জানায়, বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য অন্তত ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও হংকং-চায়না।

এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকে ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ড কালোটাকা রাখার কোনও নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।’

পরে গত ১১ আগস্ট বিষয়টি নজরে নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে বলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

এদিকে গত ১২ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সুইস রাষ্ট্রদূত মিথ্যা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ফিন্যান্স সেক্রেটারি আমাকে আগে জানিয়েছিলেন, তারা তথ্য চেয়েছিলেন, তারা (সুইস ব্যাংক) উত্তর দেননি।’

এরপর গত ১৪ আগস্ট সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে তথ্য জানাতে সর্বমোট ৩ বার চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলে হাইকোর্টকে জানায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

তখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার তথ্য জানানোর বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের বক্তব্য প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

আদালত আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত কীভাবে বললেন বাংলাদেশিদের অর্থ জমার বিষয়ে কোনও তথ্য চাওয়া হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। আপনারা (রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবী) যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তাতে প্রমাণিত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সাংঘর্ষিক।’

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনের ওপর শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

এদিকে সুইস ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিল করার বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে গত ৩০ আগস্ট তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় তিনি সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এরপর পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চিঠি-চালাচালির বাইরে আর কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে বিএফআইইউ।

এ টি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের চুক্তির অগ্রগতি জানতে ৩ মাস সময় দিলো হাইকোর্ট

Update Time : 10:52:59 am, Wednesday, 26 October 2022

এনবি নিউজ : বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য সহায়তা গ্রহণের জন্য ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) তিন মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আজ বুধবার ২৬ অক্টোবর বিএফআইইউর প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান।

আজ প্রতিবেদন দাখিল করে বিএফআইইউ জানায়, বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য অন্তত ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও হংকং-চায়না।

এর আগে গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকে ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ড কালোটাকা রাখার কোনও নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।’

পরে গত ১১ আগস্ট বিষয়টি নজরে নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে বলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন।

এদিকে গত ১২ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সুইস রাষ্ট্রদূত মিথ্যা বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ফিন্যান্স সেক্রেটারি আমাকে আগে জানিয়েছিলেন, তারা তথ্য চেয়েছিলেন, তারা (সুইস ব্যাংক) উত্তর দেননি।’

এরপর গত ১৪ আগস্ট সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার বিষয়ে তথ্য জানাতে সর্বমোট ৩ বার চিঠি দেওয়া হয়েছিল বলে হাইকোর্টকে জানায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

তখন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তিদের অর্থ রাখার তথ্য জানানোর বিষয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ডের বক্তব্য প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনও উপায় নেই বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

আদালত আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রদূত কীভাবে বললেন বাংলাদেশিদের অর্থ জমার বিষয়ে কোনও তথ্য চাওয়া হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য রাষ্ট্রকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। আপনারা (রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবী) যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন, তাতে প্রমাণিত রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সাংঘর্ষিক।’

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনের ওপর শুনানিকালে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন।

এদিকে সুইস ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য আদালতে দাখিল করার বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাসকে গত ৩০ আগস্ট তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এর ধারাবাহিকতায় তিনি সশরীরে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এরপর পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে চিঠি-চালাচালির বাইরে আর কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে বিএফআইইউ।

এ টি