Dhaka 6:25 pm, Wednesday, 24 April 2024

সুনামগঞ্জে নদীভাঙনে নিশ্চিহ্নের পথে ৭টি গ্রাম

  • Reporter Name
  • Update Time : 03:27:37 am, Friday, 5 March 2021
  • 928 Time View

 

এনবি নিউজ, সুনামগঞ্জ: যাদুকাটা ও বৌলাই নদী ভাঙনের কারণে নিশ্চিহ্নের পথে তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী,বাদাঘাট ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এসব গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার। ইতোমধ্যে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশঝাড়, ঘর-বাড়িসহ অনেক স্থাপনা চলে গেছে যাদুকাটা ও বৌলাই নদীর গর্ভে।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, যাদুকাটা ও বৌলাই নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ২০০৪ সাল থেকে দক্ষিণকুল,মাহতাবপুর, পিরিজপুর, ফাজিলপুর, ধুতমা, সোহালা, মিয়ারচরসহ সাতটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও কৃষির ওপর নিভর্রশীল মানুষগুলোর আবাদি জমি। ফলে নদীর পাড়ের প্রায় ২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। ইতোমধ্যে গ্রামগুলোর তিনশ বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। যারা একটু বিত্তশালি তারা হাওরে গিয়ে ঘর তৈরি করছেন, আর যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না তারা আত্নীয়-স্বজন ও আশপাশের বাড়িতে বসবাস করছেন।

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর মাঝে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। নদীভাঙন প্রতিরোধে যত দ্রুত সম্ভব সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত গ্রামগুলোকে রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসী ও সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

ধুতমা গ্রামের কালাম মিয়া ও জাহান মিয়া জানান,নদী ভাঙনে তাদের বাড়ি এখন ভাঙনের পথে। বাড়ি বিলীন হলে তাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না।

দক্ষিণকুল গ্রামের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে নদী ভাঙন শুরু হয়। এই ভাঙনের কবল থেকে কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আমার বাড়িটিও এখন ভাঙতে শুরু করেছে। কিন্তু সরকারিভাবে এই দুর্ভোগ লাঘবে কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

নদী ভাঙনের শিকার নজির হোসেন বলেন, এই বোলাই নদী ছোট ছিল, ভাঙতে ভাঙতে এখন নদী বিশাল আকার ধারণ করেছে। নদী ভাঙনে মসজিদ,বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মহলের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সুফল আজও পাইনি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোকে ভাঙন থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সবার সঙ্গে কথা বলব।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙন কবলিত যে সকল জায়গাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ছিল সেসব এলাকার জন্য একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এছাড়াও অন্যান্য ভাঙন কবলিত এলাকায় একটি নতুন প্রজেক্ট তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরিদর্শনে আসলে তখন আমরা ভাঙন নিয়ে একটি রিপোর্ট করবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

সুনামগঞ্জে নদীভাঙনে নিশ্চিহ্নের পথে ৭টি গ্রাম

Update Time : 03:27:37 am, Friday, 5 March 2021

 

এনবি নিউজ, সুনামগঞ্জ: যাদুকাটা ও বৌলাই নদী ভাঙনের কারণে নিশ্চিহ্নের পথে তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী,বাদাঘাট ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এসব গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক পরিবার। ইতোমধ্যে আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশঝাড়, ঘর-বাড়িসহ অনেক স্থাপনা চলে গেছে যাদুকাটা ও বৌলাই নদীর গর্ভে।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, যাদুকাটা ও বৌলাই নদী থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ২০০৪ সাল থেকে দক্ষিণকুল,মাহতাবপুর, পিরিজপুর, ফাজিলপুর, ধুতমা, সোহালা, মিয়ারচরসহ সাতটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি ও কৃষির ওপর নিভর্রশীল মানুষগুলোর আবাদি জমি। ফলে নদীর পাড়ের প্রায় ২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে। ইতোমধ্যে গ্রামগুলোর তিনশ বিঘার বেশি আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। যারা একটু বিত্তশালি তারা হাওরে গিয়ে ঘর তৈরি করছেন, আর যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না তারা আত্নীয়-স্বজন ও আশপাশের বাড়িতে বসবাস করছেন।

এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর মাঝে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা। নদীভাঙন প্রতিরোধে যত দ্রুত সম্ভব সিসি ব্লক স্থাপনের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত গ্রামগুলোকে রক্ষা করার জন্য এলাকাবাসী ও সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।

ধুতমা গ্রামের কালাম মিয়া ও জাহান মিয়া জানান,নদী ভাঙনে তাদের বাড়ি এখন ভাঙনের পথে। বাড়ি বিলীন হলে তাদের আর যাওয়ার জায়গা থাকবে না।

দক্ষিণকুল গ্রামের বাসিন্দা খালেদা বেগম বলেন, ২০০৪ সাল থেকে নদী ভাঙন শুরু হয়। এই ভাঙনের কবল থেকে কিছুই বাদ যাচ্ছে না। আমার বাড়িটিও এখন ভাঙতে শুরু করেছে। কিন্তু সরকারিভাবে এই দুর্ভোগ লাঘবে কোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

নদী ভাঙনের শিকার নজির হোসেন বলেন, এই বোলাই নদী ছোট ছিল, ভাঙতে ভাঙতে এখন নদী বিশাল আকার ধারণ করেছে। নদী ভাঙনে মসজিদ,বাড়ি-ঘর বিলীন হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী বেশ কয়েকবার ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মহলের কাছে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সুফল আজও পাইনি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোকে ভাঙন থেকে কিভাবে রক্ষা করা যায় তার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সবার সঙ্গে কথা বলব।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ভাঙন কবলিত যে সকল জায়গাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ছিল সেসব এলাকার জন্য একটি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। এছাড়াও অন্যান্য ভাঙন কবলিত এলাকায় একটি নতুন প্রজেক্ট তৈরির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পরিদর্শনে আসলে তখন আমরা ভাঙন নিয়ে একটি রিপোর্ট করবো।