Dhaka 11:26 am, Friday, 26 April 2024

ইমরান ও নওয়াজ শরিফ দুজনেরই জয়ের দাবি, যা বললেন সেনাপ্রধান

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:55:07 pm, Saturday, 10 February 2024
  • 2 Time View

সংগ্রহীত ছবি

নির্বাচনে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠনে পাকিস্তানে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর মাঝেই শনিবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির অরাজকতা আর মেরুকরণের বৃত্ত থেকে দেশকে বের করে আনতে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সেনাবাহিনী-সমর্থিত নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজই (পিএমএল-এন) জয়ী হতে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা করা হলেও ঘটেছে তার উল্টো। শুক্রবার রাতে দেশটির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও কারাবন্দি ইমরান খান নির্বাচনে নিজ নিজ দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন বলে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দাবি করেছেন।

ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী ফলে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর নওয়াজের পিএমএল-এন ৭১টি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা ৫৪টি, জামিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ) ৩টি ও অন্যান্যরা ৩৩টি আসনে জয় পেয়েছেন।

এ ছাড়া একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ১২টি আসনের ফলাফল ঘোষণা এখনও বাকি আছে। যদিও দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৫টি, পিএমএল-এনের প্রার্থীরা ৭৪টি এবং পিপিপির প্রার্থীরা ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া এমকিউএম-পি ১৭টি, জেইউআই-এফ ৩টি, পিএমএল ৩টি, আইপিপি ২টি, বিএনপি ২টি, পিএমএল-জেড ১টি, এমডব্লিউএম ১টি, পিএনএপি ১টি, বিএপি ১টি, পিকেএমএপি ১টি এবং এনপি ১টি আসনে জয় পেয়েছে।

তবে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ— যার প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়, তিনি অন্যদের জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা পাকিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে পশ্চিমাদের তোলা উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনও না এলেও জেনারেল আসিম মুনির দেশটির সব দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মেরুকরণের রাজনীতি ২৫ কোটি মানুষের উন্নয়নশীল দেশের জন্য যথার্থ নয়। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল জয়-পরাজয়ের হিসাব নয়, বরং জনগণের ম্যান্ডেট নির্ধারণের চর্চা।

দেশটির জাতীয় পরিষদের ১৪টি আসনের এখনও ফল ঘোষণা করা হয়নি। আর এসব আসন দেশটির বিস্তীর্ণ ও তুলনামূলক কম জনবহুল অধ্যুষিত বেলুচিস্তান প্রদেশের। কিন্তু ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ— উভয়ই ইতিমধ্যে জয়ের দাবি করেছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে তৈরি করা এক ভিডিওতে ইমরান খান তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সমর্থকদের বিজয় উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন, দুর্নীতি এবং অবৈধ বিয়ের এক অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে আছেন ইমরান খান। দেশটির এবারের নির্বাচনে তার দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি তার দলের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাটও বাতিল করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

পাকিস্তানের অলাভজনক সংস্থা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন নেটওয়ার্ক বলেছে, বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনই স্বতন্ত্র। তাদের আটজন ছাড়া বাকি সবাই পিটিআই সমর্থিত। পিএমএল-এন এখন ঐক্যের সরকার গঠনের বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছে। তবে দেশটিতে জোট সরকার গঠন নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

ইমরান ও নওয়াজ শরিফ দুজনেরই জয়ের দাবি, যা বললেন সেনাপ্রধান

Update Time : 07:55:07 pm, Saturday, 10 February 2024

সংগ্রহীত ছবি

নির্বাচনে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় জোট সরকার গঠনে পাকিস্তানে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এর মাঝেই শনিবার পাকিস্তানের প্রভাবশালী সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির অরাজকতা আর মেরুকরণের বৃত্ত থেকে দেশকে বের করে আনতে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে সেনাবাহিনী-সমর্থিত নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজই (পিএমএল-এন) জয়ী হতে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা করা হলেও ঘটেছে তার উল্টো। শুক্রবার রাতে দেশটির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও কারাবন্দি ইমরান খান নির্বাচনে নিজ নিজ দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন বলে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দাবি করেছেন।

ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনী ফলে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন। পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা ৯২টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর নওয়াজের পিএমএল-এন ৭১টি, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রার্থীরা ৫৪টি, জামিয়তে উলেমা-ই-ইসলাম (জেইউআই-এফ) ৩টি ও অন্যান্যরা ৩৩টি আসনে জয় পেয়েছেন।

এ ছাড়া একটি আসনে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। ১২টি আসনের ফলাফল ঘোষণা এখনও বাকি আছে। যদিও দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, ইমরান খানের পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা ৯৫টি, পিএমএল-এনের প্রার্থীরা ৭৪টি এবং পিপিপির প্রার্থীরা ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছেন। এ ছাড়া এমকিউএম-পি ১৭টি, জেইউআই-এফ ৩টি, পিএমএল ৩টি, আইপিপি ২টি, বিএনপি ২টি, পিএমএল-জেড ১টি, এমডব্লিউএম ১টি, পিএনএপি ১টি, বিএপি ১টি, পিকেএমএপি ১টি এবং এনপি ১টি আসনে জয় পেয়েছে।

তবে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ— যার প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়, তিনি অন্যদের জোটে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা পাকিস্তানের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে পশ্চিমাদের তোলা উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ ফল এখনও না এলেও জেনারেল আসিম মুনির দেশটির সব দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মেরুকরণের রাজনীতি ২৫ কোটি মানুষের উন্নয়নশীল দেশের জন্য যথার্থ নয়। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেবল জয়-পরাজয়ের হিসাব নয়, বরং জনগণের ম্যান্ডেট নির্ধারণের চর্চা।

দেশটির জাতীয় পরিষদের ১৪টি আসনের এখনও ফল ঘোষণা করা হয়নি। আর এসব আসন দেশটির বিস্তীর্ণ ও তুলনামূলক কম জনবহুল অধ্যুষিত বেলুচিস্তান প্রদেশের। কিন্তু ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ— উভয়ই ইতিমধ্যে জয়ের দাবি করেছেন।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে তৈরি করা এক ভিডিওতে ইমরান খান তার প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং সমর্থকদের বিজয় উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা লঙ্ঘন, দুর্নীতি এবং অবৈধ বিয়ের এক অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে আছেন ইমরান খান। দেশটির এবারের নির্বাচনে তার দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি তার দলের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক ক্রিকেট ব্যাটও বাতিল করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।

পাকিস্তানের অলাভজনক সংস্থা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন নেটওয়ার্ক বলেছে, বিজয়ী প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ১০০ জনই স্বতন্ত্র। তাদের আটজন ছাড়া বাকি সবাই পিটিআই সমর্থিত। পিএমএল-এন এখন ঐক্যের সরকার গঠনের বিষয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছে। তবে দেশটিতে জোট সরকার গঠন নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।