Dhaka 1:30 pm, Thursday, 25 April 2024

উন্নত দেশ থেকে ফিরে আসা রোগীর সফল চিকিৎসা বাংলাদেশে

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:56:22 pm, Saturday, 10 February 2024
  • 3 Time View

সংগ্রহীত ছবি

ভুটানের তরুণী কারমা দেমা (২৩)। ক্যানসারে নাকে পচন ধরেছিল তার। ভারতের টাটা মেমোরিয়ালে দুবার অস্ত্রোপচার করেও সুফল পাননি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ নাক ফিরে পেলেন বাংলাদেশে এসে। সম্প্রতি তার নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি সফল হয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন। শিগগিরিই দেশে ফিরে যাবেন।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে নাকের গহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসায় ক্যানসারমুক্ত হলেও রেডিওথেরাপিজনিত জটিলতায় নাক নষ্ট হয়ে যায় তার। পরে সেখানে দুই দফা অপারেশন করেও নাক পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকেরা। পরবর্তীতে কারমা বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে তিনি মেডিকেল ভিসায় দেশে চিকিৎসা নিতে আসা প্রথম বিদেশি রোগীর তালিকায় নাম লেখান।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কারমার নাকের গঠন এখন অনেকটা ভালো হয়েছে। তিন থেকে ৬ মাস পর তার আরেকটি ছোট সার্জারি করা হবে।

কামরা দেমার বড় ভাই কারমা ফুঁনথো গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বোন এখন অনেক ভালো। সেকেন্ড টাইম ফিনিশিং অপারেশন বাকি আছে। ভুটান ও বাংলাদেশ সরকারের কোলাবেরশনে চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের কোনো খরচ দিতে হচ্ছে না। বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সার্ভিসে আমরা খুব খুশি। এর আগে ২০২০ সাল থেকে ভারতে দেড় বছরের মত চিকিৎসা হয়েছিলো তার।

গত ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে সার্জনদের তিনটি টিম যৌথভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি করে কারমা দেমার। পুরো সার্জারির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

কারমা দেমা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩-তলায় অবস্থিত একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

তিনটি অপারেশন টিমের একটির প্রধান শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা হাসিব রহমান বলেন, আমরা কারমার নাকের এখন একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছি। তার নাকে আমরা সফট টিস্যু লাগিয়েছি। এরপর আরেকটা অপারেশন লাগবে। তবে সেটি আগের মত তেমন বড় সার্জারি না। সার্জারিতে কারমা দেমার বুকের পাঁজরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া/টিস্যু দিয়ে ফ্রি ফ্ল্যাট করে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এটি একটি জটিল অপারেশন।

তিনি আরও বলেন, ভারতে কারমার দুইটা অপারেশন করা হয়েছিলো। তবে সামহাউ সেগুলো সফল হয়নি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার যৌথভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। সেখানে ডা. সামন্ত লাল সেন ১৪ সদস্যের এই চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করছিলেন। সাত দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে ১৬টি জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ওই ক্যাম্পে নাকের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কারমা।

ডা. হাসিব রহমান বলেন, প্ল্যাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্ট ভুটানে নেই। তাই সেখানে কারমার সার্জারির ব্যবস্থা ছিল না। পরে চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে বাংলাদেশে আসতে বলি। এরপরে দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায় কারমা দেমা ও তার এক ভাই গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য আসেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

উন্নত দেশ থেকে ফিরে আসা রোগীর সফল চিকিৎসা বাংলাদেশে

Update Time : 07:56:22 pm, Saturday, 10 February 2024

সংগ্রহীত ছবি

ভুটানের তরুণী কারমা দেমা (২৩)। ক্যানসারে নাকে পচন ধরেছিল তার। ভারতের টাটা মেমোরিয়ালে দুবার অস্ত্রোপচার করেও সুফল পাননি। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ নাক ফিরে পেলেন বাংলাদেশে এসে। সম্প্রতি তার নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি সফল হয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন। শিগগিরিই দেশে ফিরে যাবেন।

জানা গেছে, কয়েক বছর আগে নাকের গহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে চিকিৎসায় ক্যানসারমুক্ত হলেও রেডিওথেরাপিজনিত জটিলতায় নাক নষ্ট হয়ে যায় তার। পরে সেখানে দুই দফা অপারেশন করেও নাক পুনর্গঠনে ব্যর্থ হয় চিকিৎসকেরা। পরবর্তীতে কারমা বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে তিনি মেডিকেল ভিসায় দেশে চিকিৎসা নিতে আসা প্রথম বিদেশি রোগীর তালিকায় নাম লেখান।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কারমার নাকের গঠন এখন অনেকটা ভালো হয়েছে। তিন থেকে ৬ মাস পর তার আরেকটি ছোট সার্জারি করা হবে।

কামরা দেমার বড় ভাই কারমা ফুঁনথো গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বোন এখন অনেক ভালো। সেকেন্ড টাইম ফিনিশিং অপারেশন বাকি আছে। ভুটান ও বাংলাদেশ সরকারের কোলাবেরশনে চিকিৎসা হচ্ছে। আমাদের কোনো খরচ দিতে হচ্ছে না। বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সার্ভিসে আমরা খুব খুশি। এর আগে ২০২০ সাল থেকে ভারতে দেড় বছরের মত চিকিৎসা হয়েছিলো তার।

গত ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারিতে সার্জনদের তিনটি টিম যৌথভাবে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি করে কারমা দেমার। পুরো সার্জারির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

কারমা দেমা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩-তলায় অবস্থিত একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।

তিনটি অপারেশন টিমের একটির প্রধান শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা হাসিব রহমান বলেন, আমরা কারমার নাকের এখন একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছি। তার নাকে আমরা সফট টিস্যু লাগিয়েছি। এরপর আরেকটা অপারেশন লাগবে। তবে সেটি আগের মত তেমন বড় সার্জারি না। সার্জারিতে কারমা দেমার বুকের পাঁজরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া/টিস্যু দিয়ে ফ্রি ফ্ল্যাট করে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। এটি একটি জটিল অপারেশন।

তিনি আরও বলেন, ভারতে কারমার দুইটা অপারেশন করা হয়েছিলো। তবে সামহাউ সেগুলো সফল হয়নি।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার যৌথভাবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে থিম্পুতে বাংলাদেশি চিকিৎসকদের মাধ্যমে একটি প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। সেখানে ডা. সামন্ত লাল সেন ১৪ সদস্যের এই চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটগুলোর জাতীয় সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করছিলেন। সাত দিনব্যাপী এই ক্যাম্পে ১৬টি জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ওই ক্যাম্পে নাকের চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন কারমা।

ডা. হাসিব রহমান বলেন, প্ল্যাস্টিক সার্জারি ডিপার্টমেন্ট ভুটানে নেই। তাই সেখানে কারমার সার্জারির ব্যবস্থা ছিল না। পরে চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে বাংলাদেশে আসতে বলি। এরপরে দুই দেশের সরকারের সহযোগিতায় কারমা দেমা ও তার এক ভাই গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে চিকিৎসার জন্য আসেন।