Dhaka 2:13 pm, Wednesday, 8 May 2024

অবশেষে বরিশালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা প্রশাসনের

  • Reporter Name
  • Update Time : 09:15:20 am, Monday, 23 August 2021
  • 548 Time View

এনবি নিউজ : দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বরিশালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলো প্রশাসনের। রোববার রাতে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল আহসান বাদলের বাসভবনে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বৈঠকের পর সমঝোতায় আসে দুপক্ষ। যদিও প্রশাসনের কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। তবে বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বিষয়টি। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। রাত ১টার পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে দুপক্ষের সমঝোতার খবর। তাছাড়া বৈঠক শেষে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ পুলিশ বিভাগ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোলা একটি গ্রুপ ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে হামলা চেষ্টার শিকার বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের উপস্থিতিও রয়েছে। বরিশালে প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব^ নিরসনে ভেতরে ভেতরে যে একটা চেষ্টা চলছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল রোববার দুপুরেই। সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রথম সেই ইঙ্গিত দেন। সে সময় তিনি বলেন, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি এবং খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

বরিশালের ইউএনও এবং কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন জমা পড়লেও সেগুলো এজাহার হিসাবে গ্রহণ না করে তদন্তের জন্য পিবিআইর কাছে পাঠিয়ে দেন বিচারক। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়রের পক্ষে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে আজ বরিশালে বিসিসি কাউন্সিলারদের যে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল তাও স্থগিতের ঘোষণা আসে রোববার রাতে।

রাত ১০টার পর বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে একে একে প্রবেশ করতে থাকেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি। রাত ১২টার পরে গাড়িগুলো আবার বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে জানাজানি হয় ওই বাসভবনে মেয়রসহ সব কর্মকর্তাদের আপ্যায়িত হওয়ার বিষয়টি। একইসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিরাজমান দ্বন্দ্ব দূর করে দুপক্ষের সমঝোতার খবর। রাত ১২টা নাগাদ একটি ছবিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, একই সারিতে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান- যে দুজনার বিরোধের কারণেই ১৮ আগস্ট থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে ছিল বরিশাল।

এক সারিতে দাঁড়িয়ে তোলা ওই ছবিতে আরও রয়েছেন-বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক এমপি তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল আহসান বাদল, রেঞ্জ ডিআইজি আকতারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান এবং জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনসহ আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সরকারের উচ্চমহলের আগ্রহেই ওই সমঝোতা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যে গ্রুপ ছবিটি তোলা হয়েছে সেটি ওই উচ্চমহলে পাঠানোর জন্যই তোলা হয়েছে এমনটাও নিশ্চিত করেছে ওই সূত্রটি। বৈঠকের ব্যাপারে অবশ্য কিছু বলতে রাজি হননি সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কেউ। তবে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘খুবই সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে সেখানে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে সামনের দিনগুলোয় কোনো বাড়াবাড়ি করবে না দুপক্ষ। মামলাসহ যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোরও সমাধান করা হবে। তাছাড়া আগামী দিনগুলোয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিলেমিশে কাজ করবেন এবং কোনোরকম রাগ কিংবা ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখবেন না। পরে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়িত করেন বিভাগীয় কমিশনার।’ ১৮ আগস্ট রাতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ব্যানার অপসারণ নিয়ে বিরোধে জড়ায় আওয়ামী লীগ এবং সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান। সেই ঘটনায় হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিতে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন ক্ষমতাসীন দলের ৩০ নেতাকর্মী। পরে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে পৃথক দুটি মামলাও করে ইউএনও ও পুলিশ। যার পালটা হিসাবে রোববার বরিশালের আদালতে আবার ইউএনও মুনিবুরসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করেন বিসিসির একজন প্যানেল মেয়র ও একজন কর্মকর্তা। তবে রাতে সমঝোতা বৈঠকের পর এসব জটিলতা কেটে যাবে এমনটাই মনে করছেন সবাই।

এ টি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

Popular Post

অবশেষে বরিশালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা প্রশাসনের

Update Time : 09:15:20 am, Monday, 23 August 2021

এনবি নিউজ : দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বরিশালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা হলো প্রশাসনের। রোববার রাতে বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল আহসান বাদলের বাসভবনে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বৈঠকের পর সমঝোতায় আসে দুপক্ষ। যদিও প্রশাসনের কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। তবে বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বিষয়টি। মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতিও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। রাত ১টার পর বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকেও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছে দুপক্ষের সমঝোতার খবর। তাছাড়া বৈঠক শেষে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ পুলিশ বিভাগ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তোলা একটি গ্রুপ ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে হামলা চেষ্টার শিকার বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানের উপস্থিতিও রয়েছে। বরিশালে প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব^ নিরসনে ভেতরে ভেতরে যে একটা চেষ্টা চলছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল রোববার দুপুরেই। সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রথম সেই ইঙ্গিত দেন। সে সময় তিনি বলেন, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি এবং খুব শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

বরিশালের ইউএনও এবং কোতোয়ালি থানার ওসিসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলার আবেদন জমা পড়লেও সেগুলো এজাহার হিসাবে গ্রহণ না করে তদন্তের জন্য পিবিআইর কাছে পাঠিয়ে দেন বিচারক। বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়রের পক্ষে চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসাবে আজ বরিশালে বিসিসি কাউন্সিলারদের যে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছিল তাও স্থগিতের ঘোষণা আসে রোববার রাতে।

রাত ১০টার পর বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে একে একে প্রবেশ করতে থাকেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি। রাত ১২টার পরে গাড়িগুলো আবার বেরিয়ে আসে। এরই মধ্যে জানাজানি হয় ওই বাসভবনে মেয়রসহ সব কর্মকর্তাদের আপ্যায়িত হওয়ার বিষয়টি। একইসঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিরাজমান দ্বন্দ্ব দূর করে দুপক্ষের সমঝোতার খবর। রাত ১২টা নাগাদ একটি ছবিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, একই সারিতে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে আছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান- যে দুজনার বিরোধের কারণেই ১৮ আগস্ট থেকে অগ্নিগর্ভ হয়ে ছিল বরিশাল।

এক সারিতে দাঁড়িয়ে তোলা ওই ছবিতে আরও রয়েছেন-বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক এমপি তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল আহসান বাদল, রেঞ্জ ডিআইজি আকতারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান এবং জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনসহ আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সরকারের উচ্চমহলের আগ্রহেই ওই সমঝোতা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যে গ্রুপ ছবিটি তোলা হয়েছে সেটি ওই উচ্চমহলে পাঠানোর জন্যই তোলা হয়েছে এমনটাও নিশ্চিত করেছে ওই সূত্রটি। বৈঠকের ব্যাপারে অবশ্য কিছু বলতে রাজি হননি সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কেউ। তবে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘খুবই সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে সেখানে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে সামনের দিনগুলোয় কোনো বাড়াবাড়ি করবে না দুপক্ষ। মামলাসহ যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে সেগুলোরও সমাধান করা হবে। তাছাড়া আগামী দিনগুলোয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিলেমিশে কাজ করবেন এবং কোনোরকম রাগ কিংবা ক্ষোভ ভেতরে পুষে রাখবেন না। পরে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়িত করেন বিভাগীয় কমিশনার।’ ১৮ আগস্ট রাতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ব্যানার অপসারণ নিয়ে বিরোধে জড়ায় আওয়ামী লীগ এবং সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান। সেই ঘটনায় হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিতে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন ক্ষমতাসীন দলের ৩০ নেতাকর্মী। পরে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করে পৃথক দুটি মামলাও করে ইউএনও ও পুলিশ। যার পালটা হিসাবে রোববার বরিশালের আদালতে আবার ইউএনও মুনিবুরসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলার আবেদন করেন বিসিসির একজন প্যানেল মেয়র ও একজন কর্মকর্তা। তবে রাতে সমঝোতা বৈঠকের পর এসব জটিলতা কেটে যাবে এমনটাই মনে করছেন সবাই।

এ টি